যৌনকর্মীর জানাজা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছি। এ ঘটনা ইসলামকে বিকৃতরূপে উপস্থান করবে। পাশাপাশি এটি অব্যাহত থাকলে সমাজ থেকে পতিতাবৃত্তি কিংবা যৌন নির্যাতন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছি। এই মন্তব্যটি করেছেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় পাঠক শাকিল মুশফিক।
পাঠক সজিব খান তাঁর নিজের কোনো মতামত না জানিয়ে বিষয়টি তিনি ইসলামের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ইসলাম যদি বলে পড়ানো যাবে তাহলে কোন সমস্যা নাই। আর ইসলাম যদি না করে তাহলে কাজটা করা ঠিক হয় নাই।
এদিকে পাঠক আবদুল্লাহ আল মারুফ তার মতামত জানিয়েছেন এভাবে, অবশ্যই যৌনকর্মীদের জানাজা পড়ান সঠিক ও উত্তম। কেউ তো ইচ্ছা করে যৌনকর্মী হয় না! ঠেকাতে পড়ে তাঁরা যৌনকর্মী হয়। তাছাড়া যাদের জন্য তাঁরা আজ যৌনকর্মী হয় বা তাদের কাছে যৌনতৃপ্তি নিতে যায়, সেসব খদ্দরেদের জানাজা তো খুব ঘটা করে হয়, তখন তো কেউ প্রশ্ন তোলে না।
পাঠক রেজারুল করিমের মতামতও অনেকটা আবদুল্লাহ আল মারুফের মতো। তিনি লিখেছেন, যে সমাজে এরকম মানুষ একপ্রকার ট্যাবু, তাদের বেশির ভাগই এই সমাজেরই কিংবা তার নিজের পরিবারের অবহেলা বা বঞ্চনার সৃষ্টি। বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের বেশির ভাগেরই পেটের দায়ে এই পেশা বেছে নিতে হয়েছে।
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় পাঠকবন্ধু কামরুল হাসান মন্তব্য করেছেন, পতিতাবৃত্তি করলে কি অমুসলিম হয়ে যায়?যদি তা না হয় তাহলে ইসলাম যদি নিষেধ না করে তাহলে ওদের জানাজা পড়ানো হোক। আর আল্লাহ পাক বড় বিচারক বিচার করার ভার তার উপরই দেয়া হোক। ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় পাঠকবন্ধু কামরুল হাসান করেছেন এই মন্তব্য।
পাঠক আমিরুল ইসলামও মনে করেন যৌনকর্মীর জানাজা পাড়ানো ভালো কাজ হয়েছে।
ভিন্ন মত পোষণ করেন পাঠক গাজি নুরুল ইসলাম নূর। তিনি বলছেন, জানাজা দিছে বলে তো আর পতিতা বৃত্তি বৈধ হয়ে গেলো না। কোন মানুষ গরীব হলে পতিতাবৃত্তি করতে হবে এমনটা তো নয়।
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
যেভাবে যৌনপল্লীতে আগমন
বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয়ে যৌনপল্লীতে হাজির হন মেয়েরা৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতিদরিদ্র্য পরিবারের সদস্যরা কখনো কখনো অর্থের লোভে মেয়েদের বিক্রি করে দেন বলে জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা৷ এছাড়া ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে কিংবা বিদেশ যাওয়ার লোভ দেখিয়েও মেয়েদের যৌনপল্লীতে আনা হয়৷
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
যৌনকর্মীদের জন্য ‘গরুর ট্যাবলেট’
ফরিদপুরের সরকার অনুমোদিত যৌনপল্লীর ছবি এটি৷ অভিযোগ রয়েছে, পল্লীর মালিক নতুন আসা যৌনকর্মীদের স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবনে বাধ্য করেন, যা সাধারণত গরুকে খাওয়ানো হয়৷ গরুর স্বাস্থ্য বাড়াতে ব্যবহার করা এই ট্যাবলেট মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর৷
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ‘ইনজেকশন’
বাংলাদেশের এক যৌনপল্লীর মালিক রোকেয়া জানান, স্টেরয়েড ওষুধ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়৷ কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক, বিশেষ করে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয়৷ অপ্রাপ্তবয়সিদের স্বাস্থ্য ভালো করতে বিশেষ ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় বলে জানান ৫০ বছর বয়সি রোকেয়া৷
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
অধিকাংশ যৌনকর্মী ‘স্টেরয়েড আসক্ত’
আন্তর্জাতিক উন্নয়নসংস্থা একশনএইড ইউকে এক সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০১০ সালে জানায় যে, বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ যৌনকর্মী ওরাডেক্সন বা অন্যান্য স্টেরয়েড ট্যাবলেট নিয়মিত গ্রহণ করে৷ তাঁদের গড় বয়স ১৫-৩৫ বছর৷ বাংলাদেশে দু’লাখের মতো যৌনকর্মী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ
স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণা চালাচ্ছে একশনএইড৷ সংস্থাটির বাংলাদেশ অংশের কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানিয়েছেন, ‘‘ওরাডেক্সন গ্রহণ করার পর শুরুতে মেয়েদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে৷ কিন্তু এটি নিয়মিত সেবন করলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চামড়ায় ক্ষতসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়৷’’
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
এইচআইভি সংক্রমণ
বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ বা এইডস রোগ হওয়ার খবর মাঝে মাঝে পত্রিকায় প্রকাশ হয়৷ তবে ঠিক কতজন যৌনকর্মী এইচআইভি আক্রান্ত তার হালনাগাদ কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি৷ অনেকক্ষেত্রে কনডম ব্যবহারে খদ্দেরের অনীহা যৌনকর্মীদের মাঝে যৌনরোগ ছড়াতে সহায়ক হচ্ছে৷ (ফাইল ফটো)
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ যৌনকর্মী
বাংলাদেশের যৌনপল্লীগুলোতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জোর করে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে৷ আর এই পেশায় যাঁরা একবার প্রবেশ করছেন, তাঁদের জীবনেও নানা ঝুঁকি থাকে৷ পতিতাপল্লীতে হামলার খবর কিন্তু মাঝেমাঝেই শোনা যায়৷ (ফাইল ফটো)
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
শত বছরের পুরনো পল্লী উচ্ছেদ
মাদারিপুরের পতিতাপল্লীটি ছিল শত বছরের পুরনো৷ গত বছর এই পল্লী উচ্ছেদ করেছেন স্থানীয়রা৷ এমনকি পল্লীটি জোরপূর্বক উচ্ছেদ না করার হাইকোর্টের আদেশও এক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয়েছে৷ সেখানে পাঁচশ’র মতো যৌনকর্মী বাস করতেন৷ কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলের একটি পতিতাপল্লীও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এ রকম উচ্ছেদের আতঙ্কে রয়েছেন আরো অনেক যৌনকর্মী৷
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
মধ্যপ্রাচ্যে ‘যৌনদাসী’ বাংলাদেশের মেয়েরা!
বাংলাদেশের বেশ কয়েক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ তাঁদের পাচার করে সিরিয়ায় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক বার্তাসংস্থা৷ এ সব নারীকে ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে৷ তবে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়েও বাংলাদেশি নারীদের জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে৷
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
পতিতাপল্লী বন্ধ করা খুবই সহজ কিন্তু দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রের জন্য কর্তব্য এবং রাষ্ট্রের উপর ফরজ- এই মন্তব্যটি পাঠক পাঠক আল আমিনের।
শেখ মোহাম্মদ নূর নবীর একেবাকে সোজা প্রশ্ন, পতিতাদের খদ্দেরদের যদি জানাজা হয়, তাহলে পতিতাদের জানাজা হবেনা কেন?
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: খালেদ মুহিউদ্দীন
-
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
হল্যান্ডের ‘পতিতাপল্লী’ পর্যটকদের মূল আকর্ষণ
নেদারল্যান্ডসে পতিতাবৃত্তি শুধু বৈধ নয়, ইউরোপের এই দ্বীপদেশটির পতিতাপল্লী সত্যিকার অর্থেই বিশ্ববিখ্যাত৷ ঐ ‘রেডলাইট জোন’ দেখতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসে আমস্টারডামে৷ নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও দেহব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ৷
-
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
জার্মানি এবং ফ্রান্সে কঠোর আইন
জার্মানি এবং ফ্রান্সেও দেহব্যবসা বৈধ৷ তবে এ দু’দেশেই যৌনকর্মীদের এই ব্যবসা করতে হয় কঠোর আইন মেনে৷ জার্মানির কিছু শহরে এখনো যৌনকর্মীরা রাস্তায় নেমে খদ্দের ডাকতে পারেন না, এভাবে খদ্দের সংগ্রহ করা সেসব জায়গায় আইনত দণ্ডনীয়৷ ফ্রান্সেও ২০১৪ সালে এমন একটা আইন হয়েছে, যা মেনে যথেচ্ছ দেহব্যবসা করা খুব কঠিন৷
-
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
সুইডেন আর নরওয়েতেও নিয়ন্ত্রিত পতিতাবৃত্তি
ফ্রান্স ২০১৪ সালে যে আইন প্রবর্তন করে, সেটা প্রথম চালু হয়েছিল সুইডেনে, ১৯৯৯ সালে৷ এ কারণে আইনটি ‘সুইডিশ মডেল’ হিসেবে পরিচিত৷ এ আইনে যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষা করে দালালদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
-
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় স্বাস্থ্যপরীক্ষা বাধ্যতামূলক
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতেও দেহব্যবসা বৈধ৷ তবে এ দু’টি দেশে ১৯ বচর বয়স না হলে কেউ দেহব্যবসায় আসতে পারেন না৷ যৌনকর্মীদের যাতে কোনো যৌনরোগ না হয়, কিংবা তাঁদের মাধ্যমে খদ্দেরদের মাধ্যে যাতে এইডস, সিফিলিস বা অন্য কোনো রোগ ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে যৌনকর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হয়৷ অবশ্য শুধু সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতে নয়, জার্মানিতেও ঐ একই নিয়ম৷
-
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
গ্রিস এবং তুরস্কে পতিতাবৃত্তি নিয়ন্ত্রিত
গ্রিস এবং তুরস্কেও পতিতাবৃত্তি পুরোপুরি বৈধ, তবে দেহ ব্যবসার আইন খুব কঠিন৷ জার্মানির মতো এই দু’টি দেশেও যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা করা বাধ্যতামূলক৷ এছাড়া যৌনকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান কিনা, তা সবসময় তদারক করা হয়৷ স্বাস্থ্যকার্ডেই লেখা থাকে স্বাস্থপরীক্ষার সব তথ্য৷
-
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
যে দুই দেশের পতিতাপল্লীতে ধীরে চলা মানা
ব্রিটেন আর আয়ারল্যান্ডের পতিতাপল্লী বা ‘রেড লাইট জোন’-এর প্রায় সব আইনই জার্মানির মতো ছিল৷ তবে সম্প্রতি ব্রিটেনে কিছু বেসরকারি সংস্থার দাবিতে এতে নতুন কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে৷ ব্রিটেনের রেড লাইট জোন-এ এখন যেমন ধীরে গাড়ি চালানো নিষেধ৷
-
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
কাউকে জোর করে পতিতা বানানো যায় না
ইউরোপের সব দেশেই পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ৷ তবে আইন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশভেদে একটু হলেও অন্যরকম৷ যেমন স্পেন এবং পর্তুগালেও দেহব্যবসা বৈধ৷ কিন্তু স্পেনে কাউকে জোর করে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্মী বানানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷
-
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
দক্ষিণ অ্যামেরিকায় অন্যরূপ
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অধিকাংশ দেশেই যৌনব্যবসা বৈধ৷ তবে কিছু দেশে মাফিয়া এবং মানবপাচার বড় সমস্যা হয়ে ওঠায়, এই ব্যবসার ওপর কড়াকড়ি এবং তদারকি বেড়েছে৷ দেহব্যবসাকে মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতে রয়েছে কঠোর আইন৷ তারপরও দেশ দু’টিতে মাফিয়া চক্রের আধিপত্য রয়ে গেছে৷
-
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
প্রতিবেশী হয়েও নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আলাদা
নিউজিল্যান্ডে যৌনব্যবসা একেবারেই বৈধ৷ তবে প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাজ্যে এই ব্যবসা এখনো অবৈধ৷ ২০০৩ সালে আইন করে সব প্রাপ্তবয়স্কের জন্য যৌনব্যবসাকে বৈধ করে দেয় নিউজিল্যান্ড৷
-
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
এশিয়ায় লুকোনো পতিতাবৃত্তি
ভারতের পতিতাবৃত্তি বৈধ৷ তারপরও পতিতাবৃত্তি চলে আড়ালে-আবডালে৷ রাস্তায় নেমে পতিতারা খদ্দের সংগ্রহ করতে পারেন না৷ খদ্দেররা অর্থের বিনিময়ে যৌনক্ষুধা মেটাতে যায় রাতের আঁধারে৷ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে পতিতালয় কমলেও মাসাজ পার্লার এবং আবাসিক হোটেলে প্রায়ই চলে পুলিশি অভিযান৷ খদ্দেরসহ পতিতা আটকের খবর আসে তখন৷ থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সে পতিতাবৃত্তি চলে অবাধে৷ তবে দেশ দুটিতে এই ব্যবসা আইনের চোখে অবৈধ৷
লেখক: ইশা ভাটিয়া/এসিবি