সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকও পুলিশের সঙ্গে একমত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফোর-ফাইভ ক্লাস পাস ঐ যুবকের ফটোশপে কাজ করার মতো দক্ষতা নাই৷''
তবে এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বন্ধু আবদুল্লাহ আল-হাসান লিখেছেন, ‘‘ফটোশপ করার জন্য শিক্ষা লাগে না, নীলক্ষেতে যারা কম্পিউটারে ফটোশপের কাজ করে তারা কেউ ক্লাস থ্রি বা ফোর-এর বেশি পড়েনি৷ তার চেয়ে বড় কথা আইডি যার দায়-দায়িত্বও তার৷ যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম সে ফটোশপের কাজ সে পারে না৷ কিন্তু সে কি অন্য কোথা থেকে এডিট করা ছবি পোস্ট করতে পারে না?
নাসিরনগরে রসরাজ দাস সম্পর্কে প্রায় একই মত পোষণ করেন মোসাদ্দেক হোসেন, ‘‘বর্তমানে ফটো এডিট করতে স্কুলে যাওয়া লাগে না৷ যারা কোনোদিন স্কুলে যায়নি, তারা দু-একবার দেখলেই অ্যান্ড্রয়েড সেট দিয়ে একটি ছবির মাথার উপর আর একটি ছবি বসিয়ে দিতে পারে৷ আমাদের দেশের অনেক গুণীজন অ্যান্ড্রয়েড বা মোবাইল সেট সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ, তাই উনারা অতি গুণীজন হয়েও এরকম অনভিজ্ঞ মন্তব্য করেন৷''
-
মন্দিরে হামলা, আগুন এবং মন্ত্রীর ‘অভব্য’ মন্তব্য
এ বছর সাম্প্রদায়িক নির্যাতন অনেক বেড়েছে
গত এপ্রিলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছিল, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসে প্রায় তিনগুণ সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ তখন তারা জানিয়েছিলেন, তিন মাসে ৮২৫০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ২৬১টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল৷
-
মন্দিরে হামলা, আগুন এবং মন্ত্রীর ‘অভব্য’ মন্তব্য
এবার যেখানে শুরু
গত ৩০ অক্টোবর ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে একটি পোস্ট দেয়ার প্রতিবাদের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু জনপদে দিনভর সহিংসতা চালায় দুর্বৃত্তরা৷ রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নাসিরনগর উপজেলা সদরে অন্তত ১০টি মন্দিরে হামলা ভাংচুর চালায়৷ এ সময় তারা শতাধিক বাড়ি ঘরে হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাট করে৷একইদিন হবিগঞ্জের মাধবপুরেও কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে৷
-
মন্দিরে হামলা, আগুন এবং মন্ত্রীর ‘অভব্য’ মন্তব্য
প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘‘পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরের ওপর হামলা চালানো হয়েছে৷ পুলিশকে আগাম জানিয়েও কোনো নিরপত্তা পাওয়া যায়নি৷’’ মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘ পুলিশ প্রশাসন আগাম নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিলে এই হামলা হতো না৷’’
-
মন্দিরে হামলা, আগুন এবং মন্ত্রীর ‘অভব্য’ মন্তব্য
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রীর ‘অভব্য’ মন্তব্য এবং প্রতিবাদ
বরং সরকারের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক ঘটনার তিনদিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গিয়ে হিন্দুদের ‘মালাউনের বাচ্চা’ সম্বোধন করে তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে অতিরঞ্জিত করছে সাংবাদিকরা, অথচ ঘটনা কিছুই না৷’’ মন্ত্রী হয়ে একটি সম্প্রদায়কে নিয়ে তাঁর এমন অভব্য মন্তব্যের প্রতিবাদ শুরু হয় সারা দেশে, ওঠে তার অপসারণের দাবি৷
-
মন্দিরে হামলা, আগুন এবং মন্ত্রীর ‘অভব্য’ মন্তব্য
মন্দিরে আরো হামলা, ভাঙচুর
৩০ অক্টোবরের হামলার পর গতকাল (৩ নভেম্বর) আবার হামলা হয় নাসিরনগরে৷ এবারের হামলায় হিন্দুদের বেশ কিছু বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়৷ এছাড়া গত কয়েকদিনে গোপালগঞ্জ, রংপুর, বরিশাল, ঠাকুরগাঁওসহ আরো কয়েকটি জায়গায় হিন্দুদের মন্দিরে হামলা হয়েছে৷
-
মন্দিরে হামলা, আগুন এবং মন্ত্রীর ‘অভব্য’ মন্তব্য
প্রতিবাদের মুখে একাত্বতা প্রকাশ
দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুরের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা৷ অবরোধ চলার সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ৷ এ সময় তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন৷
অন্যদিকে ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ মতামত প্রকাশ করেছেন পাঠক মতিবাবু মলাকর এভাবে, ‘‘আমার ধর্ম কত মহান তা নির্ভর করবে অন্য ধর্মের মানুষের সাথে আমরা কেমন আচরণ করি তার উপর৷ ধর্ম নিয়ে উসকানি দেওয়া এবং নাসিরনগরে হিন্দুদের শত শত ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ প্রসঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা এত বড় পরিসরে না ঘটলেও পারতো৷ প্রতিবাদের ভাষাটা সাম্প্রদায়িক ভাবে না হয়ে ব্যক্তি কেন্দ্রিক হলে সবচেয়ে ভালো হতো৷ যে হিন্দু লোকটি উসকানিমূলক ছবি ফেসবুকে দিয়েছিল সে তো আবশ্যই অপরাধী, এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার কোনো কারণ নেই৷ সবাই অপরাধীকে কঠোর সাজা দিতে পারতো৷ এমন সাজা যা দেখে পরবর্তিতে কেউ এমন কাজ করতে সাহস পাবে না৷ কিন্তু কয়েকটা কুলাঙ্গারদের জন্য যেমন ইসলাম ধর্মের বদনাম হয় তেমনি কয়েকটা কুলাঙ্গারদের জন্য হিন্দু ধর্মের লোকরাও বিপদে পড়ে৷''
তবে একটি মুসলিম প্রধান দেশে এমন ঝুঁকিপূর্ণ একটি ছবি কেউ নিজের ফেসবুকে দিতে পারে তা দেখে খুবই অবাক হয়েছেন শেখ রিয়াদ মোহাম্মদ নূর৷
ওদিকে ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু আকাশ ইকবাল মনে করেন, বাংলাদেশে আইন থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ নেই৷ আর সে কথাটাই তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর বক্তব্যে৷ লিখেছেন, ‘‘কী বলবো, বলার কিছু নেই, তারপরও না বলে থাকতে পারি না৷ রসরাজ একজন জেলে৷ মাঠে, পুকুরে, ডোবায় ও নদীতে মাছ ধরে৷ শিক্ষায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত৷ তার মধ্যে সে সংখ্যালঘু সনাতন ধর্মের৷ ৮৮ ভাগ মুসলিম প্রধান দেশে তার কিংবা কোনো হিন্দু নাগরিকের সাহস নেই যে মুসলিমদের নিয়ে কুটুক্তি করবে৷ আইন নাকি সবার জন্য সমান...৷ আসলে যার টাকা আছে তার জন্য আইন৷ যখন রসরাজের বিষয়টা প্রমাণিত হয়নি, ততক্ষণ সারা দেশের সকল মুসলিম তার বিপক্ষে তার ফাঁসি চেয়ে আন্দোলন করেছে৷ রসরাজের পুরো গ্রামের ৩০০ ঘর বাড়ি, ১৫০ মানুষকে মারধর করে আহত ও ১৫টি ধর্ম মন্দির ভেঙে ফেলে৷ তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি মামলাও করেছে৷ শুনলাম কোনো উকিল দাড়ায়নি ওর পক্ষে৷ আবার শুনলাম প্রধান আইন সমিতি তার পক্ষ নিয়েছে৷ তবে এখন কেন নিচ্ছে? আগে কোথায় ছিল? এখন তো কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা দেশের মানুষের কাছে প্রমাণিত৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
-
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
প্রথম: সিরিয়া
সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে৷
-
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
দ্বিতীয়: সোমালিয়া
সরকারের সঙ্গে আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাত এখনও চলছে৷ আর এর শিকার হচ্ছে বান্টু (বেশিরভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) ও বেনাদিরি (বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী) গোষ্ঠীর মানুষজন৷
-
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
তৃতীয়: সুদান
দেশটির দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী নন-আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর খার্তুম সরকারের নিপীড়নের অভিযোগে দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০০৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেটি এখনও চলছে৷ ফলে দারফুরে বসবাসকারী ফুর, জাঘাওয়া, মাসালিট সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষদের জীবন সংকটে রয়েছে৷
-
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
চতুর্থ: আফগানিস্তান
বিদেশি সৈন্য চলে যাবার পর সেখানে আবারও তালেবানের শক্তি বেড়েছে৷ ফলে হাজারা, পশতুন, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন, বেলুচি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতনের আশঙ্কা বাড়ছে৷
-
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
পঞ্চম: ইরাক
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ তারপরও সেখানে শিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের জীবন বিপদমুক্ত নয়৷ সংকটে রয়েছে সুন্নি, কুর্দ, তুর্কমেন, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি, শাবাক, বাহাই, ফিলিস্তনি সহ অন্যান্যদের জীবনও৷
-
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
ষষ্ঠ: ডিআর কঙ্গো
স্থানীয় মায়ি-মায়ি মিলিশিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডার বিদ্রোহী এবং কাতাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে মানুষের প্রাণ যাওয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে সংকটে আছে হেমা, লেন্ডু, হুতু, লুবা, লুন্ডা, টুটসি, বাটওয়া সহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর জনগণ৷
-
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
সপ্তম: পাকিস্তান
শিয়া (হাজারা সহ), আহমদি, হিন্দু, খ্রিষ্টান, মোহাজির, পশতুন, সিন্ধ সম্প্রদায়৷
-
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
অষ্টম: মিয়ানমার
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় সংকটে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন৷ এছাড়া কচিন, কারেনি, কারেন, মন, রাখাইন, শান, চিন এবং ওয়া জাতির জনগণও ভালো নেই সেখানে৷
-
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
বাংলাদেশ, ভারতের অবস্থান
‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’-এর তালিকায় বাংলাদেশ ৪১তম আর ভারত ৫৪তম অবস্থানে আছে৷ বাংলাদেশে আহমদিয়া, হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতির লোকেদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ আর ভারতে আসামিজ, বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উপজাতি এবং কাশ্মিরী, শিখ, মুসলিম ও দলিতরা হুমকির মুখে আছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
লেখক: জাহিদুল হক