‘‘কোনো শিশু বা নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কিংবা নির্যাতিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে এই নম্বরে ফোন করুন'' – ডয়চে ভেলের এই অনুরোধের উত্তরে আমাদের ফেসবুক পাতায় বন্ধু ইমরান খানের এই মন্তব্য, ‘‘আরে ভাই, নারী, শিশুদের কি নির্যাতন করবো? ওরাই এখন আমাদের উল্টো নির্যাতন করে৷ তাই আমাদের জন্য একটি নাম্বার দিন, আমরা যেন ফোন করতে পারি৷''
মাহবুব শাকিলের ধারণা, এই নম্বরে ফোন করলে কোনো সাহায্য পাওয়া যাবে না, কোনো লাভ নেই৷ তাঁর মন্তব্য,‘‘ ওরা অমানুষ, চাপাবাজ৷''
ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু আরমান বেশ বিশ্বাসের সঙ্গেই জানিয়েছেন যে, দরকার পড়লে ‘হেল্পলাইন'-এর এই নম্বরে তিনি ফোন করবেন৷
ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু ফিরোজ খান বন্ধু ইমরান খানের সাথে একমত৷ অর্থাৎ তাঁরও ধারণা এখন নারী নয়, উল্টো পুরুষই নির্যাতনের শিকার৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
লেখক: দেবারতি গুহ
মো. নাঈম বাবু অনেকটা একই মত পোষন করেন৷ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘পুরুষ নির্যাতন হলে কাকে ফোন দেবে?''
এখানে শিশু ও নারীর বিপদে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারে এমন নম্বর দেওয়া হলো৷ কিন্তু পুরুষদের জন্য তো কোনো ঠিকানা জানানো হলো না? প্রশ্ন পাঠক সুভাষের৷
মোবারক হোসেন সুমনেরও নম্বরের ব্যাপারে একদমই বিশ্বাস নেই৷ তাঁর ধারণা, এ সব ‘হেল্পলাইন' নম্বরগুলো নাকি উল্টে আরো বিপদে ফেলে৷
অন্যদিকে তাপস মজুমদার মনে করেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের সাহায্য করার জরুরি ফোন নম্বরটি জানানো বেশ ভালো উদ্যোগ৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘এভাবে সংখ্যালঘুদের জন্য হটলাইন নাম্বার দেয়া ও সহায়তা করা দরকার৷''
জলিলুর রহমানও উদ্যোগটিকে ভালো মনে করছেন৷ তবে তাঁর খানিকটা সন্দেহ রয়েছে উদ্যোগের প্রয়োগ সম্পর্কে৷ তাঁর মতামত তিনি তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘‘ভালো উদ্যোগ যদি কাজে লাগানো যায়৷ কারণ আমাদের দেশে উদ্যোগ আছে, কিন্তু বাস্তবতা নেই৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ