সম্প্রতি গাইবান্ধার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ক্লাসের মধ্যে যৌন হয়রানি করেন প্রধান শিক্ষক আয়নাল হক৷ এতে সাময়িকভাবে তাকে বরখাস্ত করা হলেও, তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷
দেশে আইন থাকলেও আইনের প্রয়োগ নেই৷ তাই উপায়ান্তর না দেখে ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু অর্জুন বৈদ্যর পরামর্শ, ‘‘আমার মতে এইরকম বিচার না চেয়ে তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে সকলে মিলে শাস্তি দেওয়া উচিত৷''
‘‘রক্ষক যখন ভক্ষক হয়, তখন জাতি এর থেকে কী আর আশা করতে পারে? আইন, বিচার, শাসন বিভাগের কাছ থেকে জাতি আজ দিশেহারা৷ নির্যাতনের শিকার ক্রমাগত বেড়েই চলছে৷'' বাংলাদেশের ছাত্রীদের প্রতি যৌন হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় এই মন্তব্য পাঠক দেলোয়ার হোসেনের৷ দেলোয়ার বাংলাদেশের অপরাধীর শাস্তি বা বিচারের ব্যাপারে সত্যিই হতাশ৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
-
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
লেখক: দেবারতি গুহ
অপরাধমূলক অনেক ঘটনা নিরবে ঘটে যায়, যা কেউ জানেই না৷ তাই বিচারের তো কোনো প্রশ্নই আসে না৷ তাই তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সাদেকা হালিম ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘কোনো ঘটনা মিডিয়াতে আসলে তার বিচার হয়৷ কিন্তু ক'টি ঘটনাই বা মিডিয়াতে আসে? ফলে অধিকাংশ ঘটনারই কোনো বিচার হয় না৷ এই বিচারহীনতার সংস্কৃতিই যৌন নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে স্কুল-কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব হতো৷''
‘‘ঐ শিক্ষকগুলোকে ধরে সবার সামনে তাদের পুরুষাঙ্গ কেটে দেওয়া উচিত৷'' যেসব শিক্ষকরা ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন করেন, তাদের ওপর মোহাম্মদ আল-আমিন এতটাই ক্ষিপ্ত যে তিনি এভাবেই তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷
‘‘এ রকম শিক্ষকদের শিক্ষক বলা উচিত নয়, সে যোগ্যতা তারা হারিয়েছেন'', এমনটাই মনে করেন পাঠক মিষ্টি ঘোষ৷
এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত মো. ইসরাফিলের৷ তাঁর ধারণা, ‘‘যোগ্যতা ছাড়া দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ দিলে এমনই হবে৷''
-
শিশুদের নিয়ে মন খারাপ করা কিছু খবর
সাত মাসে ৬১ গণধর্ষণ
শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ২৬৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম’ এর হিসেবে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৬১টি শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই তথ্য জানায় ফোরামটি৷ একই সময়ে ধর্ষণ, উত্ত্যক্তসহ যৌন সহিংসতার শিকার হয় ৩৪৭টি শিশু৷ এর মধ্যে চারটি ছেলেশিশুও রয়েছে৷
-
শিশুদের নিয়ে মন খারাপ করা কিছু খবর
বয়স ১৫ হওয়ার আগেই বিয়ে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গড়ে ২৯ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় তাদের বয়স ১৫ পার হওয়ার আগে৷ আর ৬৫ শতাংশের বিয়ে হয় বয়স ১৮ পার হওয়ার আগে৷
-
শিশুদের নিয়ে মন খারাপ করা কিছু খবর
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৫ লাখেরও বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷ এর মধ্যে প্রায় ১৭ লাখেরও বেশি শিশুর বাস খোদ ঢাকা শহরে৷ বাংলাদেশ সরকার ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করলেও আদতে তা মানা হচ্ছে না৷ সরকারিভাবে নেই কোনো নজরদারির ব্যবস্থা৷
-
শিশুদের নিয়ে মন খারাপ করা কিছু খবর
কিশোর অপরাধী
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিবছর কমপক্ষে দুই হাজার শিশুকে নানা অপরাধে আটক করা হয়৷ শিশু অধিকার ফোরামের হিসেবে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২৭৬ জন শিশুকে অস্ত্র ও মাদক বহনসহ নানা অভিযোগে আটক করা হয়৷
-
শিশুদের নিয়ে মন খারাপ করা কিছু খবর
মাত্র তিনটি
আইন অনুযায়ী শিশু-কিশোর অপরাধীদের বিচার করা হয় কিশোর আদালতে৷ এরপর বিচার শেষে শাস্তি ভোগের জন্য তাদের শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর কথা৷ কিন্তু বাংলাদেশে এমন কেন্দ্র আছে মাত্র তিনটি৷ গাজীপুরে দু’টি এবং যশোরে একটি৷ এর মধ্যে গাজীপুরের একটি মেয়েদের জন্য৷ সব মিলিয়ে এই তিনটির ধারণ ক্ষমতা ৬০০৷ অর্থাৎ আটক শিশুদের বড় একটি অংশের জায়গা উন্নয়ন কেন্দ্রে হয় না৷ ফলে তাদের কারাগারে থাকতে হয়৷
লেখক: জাহিদুল হক
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা যেভাবে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন করছেন, তা জেনে ডয়চে ভেলের ফেসবুকবন্ধু সবুজ হাসানের শুধু একটাই কথা, ‘‘হায়রে দেশ, এটা খুবই দুঃখজনক!''
‘‘দেশে কোনো নীতি নাই৷'' এই সোজা মন্তব্য মঞ্জুরুল আলমের৷
এছাড়া ডয়চে ভেলের পাতায় শিশুদের যৌন হয়রানি বিষয়ক নানা তথ্য জেনে রাজু খান লিখেছেন, ‘‘অনেক সুন্দর একটা পেজ৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ