গর্ভবতী মায়েদের কাছে সিজার এখন ফ্যাশন | আলাপ | DW | 18.09.2017
  1. Inhalt
  2. Navigation
  3. Weitere Inhalte
  4. Metanavigation
  5. Suche
  6. Choose from 30 Languages

সাক্ষাৎকার

গর্ভবতী মায়েদের কাছে সিজার এখন ফ্যাশন

বাংলাদেশে সিজারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানে সিজারের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়৷ কিন্তু বাংলাদেশে এই সংখ্যা ৩৫ শতাংশ পেরিয়ে গেছে৷

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাসিমা বেগম ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বাংলাদেশে গর্ভবতী মা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চান না৷ ফলে সবাই সহজেই সিজারের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন৷ এমনকি অনেকক্ষেত্রে সিজার মেয়েদের কাছে ফ্যাশানেও পরিণত হয়েছে৷

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে সিজারিয়ান অপারেশনের সংখ্যা এখন কেমন?

অধ্যাপক ডা. নাসিমা বেগম: অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সিজারিয়ান অপারেশন অনেক বেড়ে গেছে৷ প্রতি বছর কী হারে বাড়ছে এটা?

গত ৩০ বছরে এর ব্যাপক প্রসার হয়েছে৷ এর অনেকগুলো কারণ আছে৷ প্রধান কারণ হলো মানুষের সচেতনতা৷ আগের চেয়ে রোগী এবং তাঁর স্বজনদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ আমাদের দেশে গ্রামে এখনও ১৮ বছরের আগে মেয়েরা গর্ভবতী হয়৷ এতে করে তাঁর পেলভিস বা যোনি পথের বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না৷ অল্প বয়সে গর্ভবতী হওয়ার কারণে মেয়েদের মধ্যে ভয় বা ভীতি থেকে যায়৷ এখন মেয়েরা এসেই বলেন, ‘আমার সিজার কবে করবেন?' তাঁরা নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতিই নিতে চান না৷ মেয়েদের এমন ‘অন ডিমান্ড' সিজারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ যাঁরা লেখাপড়া শিখে ২৫ বছরের পর বিয়ে করছেন, তাঁদের সমস্যা আবার অন্যরকম৷ অনেক সময় তাঁদের প্রসবজনিত জটিলতা বৃদ্ধি পায়৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়বেটিসও ধরা পড়ে তাঁদের৷ বাচ্চারও অনেক সময় জটিলতা দেখা দেয়৷

সিজারের কিছু উপকার আছে, আবার ক্ষতির দিকও আছে৷ তা সেগুলো কী?

ক্ষতিকর দিক হলো, স্বাভাবিক জন্মদানের ক্ষমতা কমে যাওয়া৷ এখন মেয়েরা অনেক সময় অধৈর্য্য হয়ে যান৷ তাঁরা স্বাভাবিক জন্মদানের প্রস্তুতি নিতে চান না৷ এরাই ‘অন ডিমান্ড' দাবি করে বসেন যে, সিজার করে দিন৷ তখন ডাক্তারকে বাধ্য হয়ে সেদিকে যেতে হয়৷ সিজারের একটা জটিলতা তো আছেই৷ অনেকের ইনফেকশন হতে পারে, রক্তপাতও হতে পারে৷ তাছাড়া বাচ্চার জটিলতাো বেড়ে যেতে পারে৷ শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা বা নিউমোনিয়া হতে পারে৷ অজ্ঞান করার জটিলতাও বেড়ে যেতে পারে৷ আসলে একটা ‘রিস্ক' নিয়েই সিজার করতে হয়৷

ক্ষতির দিক বেশি হলে তারপরও আপনারা সিজার কেন করেন?

আসলে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি, অল্প বয়সে বিয়ে বা বেশি বয়সে বিয়ে এর প্রধান কারণ৷ আগে তো মেয়েরা গর্ভকালীন চেকআপে আসতেন না৷ এখন ৭০ ভাগ নারী গর্ভকালীন চেকআপে আসেন৷ ফলে সমস্যাগুলো আগেই ধরা পড়ে এবং সিজারের ‘ইন্ডিকেশন' তৈরি হয়৷ এটাও একটা কারণ৷ তাছাড়া মেয়েরা ইচ্ছে করেই সিজার করাচ্ছেন৷ আর একবার সিজার হলে বারবার সিজার করতে হয়৷

সিজার করলে মা পরবর্তীতে কী ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে একবার সিজার করলে মায়ের প্রতিবারই সিজার করাতে হয়৷ আমরা তিনবারের বেশি সিজার করি না৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চারবার সিজার করি আমরা৷ এখানে মায়ের জরায়ুর ইনফেকশন হতে পারে৷ পেটের মধ্যে নানা ধরনের জটিলতা হয়ে পরবর্তীতে মাসিকের সমস্যাও হতে পারে৷

এখন মেয়েরা এসেই বলেন, ‘আমার সিজার কবে করবেন?’

সিজারের ফলে সন্তানের উপকার হয় না ক্ষতি হয়?

মায়ের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে বা সন্তারের সুবিধার জন্য যখনসিজারের দরকার হয়, তখন সিজার করতেই হবে৷ অর্থাৎ সেটাই ভালো৷ কিন্তু যখন ইচ্ছে করে সিজার করানো হয় বা ডাক্তাররা করতে বলছেন বলে করানো হয়, তখন সেটাকে খারাপ বলতে হবে৷

উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশে সিজার বা সি-সেকশন করা মায়ের সংখ্যা বেশি বলে শোনা যায়৷ এটা কি ঠিক?

এটা বলা ঠিক হবে না৷ শ্রীলঙ্কাতেও সিজারের সংখ্যা ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ৷ আমাদের দেশেও এর ‘রেট' প্রায় ৩৫ শতাংশ৷ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত দেশগুলোতেও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে থাকে সিজারের রেট৷ যদিও বইপত্রে বলা হচ্ছে সিজারের রেট ১৫ শতাংশের কম হওয়া উচিত৷ কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন কারণে এই রেট বেড়ে যাচ্ছে৷ কেউ আসলে নর্মাল ডেলিভারির ‘রিস্ক' নিতে চাচ্ছেন না৷ আর গর্ভবতী মা ব্যাথা সহ্য করতে চাচ্ছেন না৷ এ সব কারণে রেট বেড়ে যাচ্ছে৷

সিজার করা হয় মূলত নারীদের ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য৷ কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে, হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর বাণিজ্যিকীকরণের জন্য সিজার বেড়ে যাচ্ছে৷ এ কথা কি ঠিক?

আমি তো সারা জীবন সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেছি৷ সরকারি হাসপাতালগুলোতে বা মেটারনিটি সেন্টারে সিজারের রেট ৬০ শতাংশ৷ এটা কেন? আসলে ওই হাসপাতালগুলোতে জটিল রোগীরাই আসেন৷ শুধু হাসপাতাল থেকে যদি তথ্য নেন, তাহলে দেখবেন যে এই রেট ৭০ শতাংশ পর্যন্ত৷

সিজার বেশি হওয়ার সঙ্গে খাবারের কোনো যোগসূত্র আছে কি?

তেমন কিছু না৷ তবে অনুন্নত এলাকাগুলোয়, যেখানে দরিদ্র মানুষ বেশি থাকে, সেখানে অ্যানিমিয়া প্রধান কারণ৷ কিন্তু উন্নত এলাকাগুলোয় সেই ধরনের কোনো সমস্যা নেই৷

বর্তমানে সিজারের সংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে৷ এটা কি ঠিক?

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এটা সব সময়ই কমানোর চেষ্টা করে থাকেন৷ আমাদের কাছে কোনো গর্ভবতী মা এলে আমরা তাঁকে বলি, স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা জন্ম দেয়ায় কোনো সমস্যা না থাকলে সেটাই করা উচিত৷ শুধু শুধু অপারেশনে আমরা যাবো কেন? হাসপাতালে এত ‘লোড'....তাই আমরা চাইছি স্বাভাবিকভাবেই শিশুর জন্ম হোক৷ কিন্তু এ কথা যখন রোগীর স্বজনকে বলছি, তখন তাঁরা আর ধৈয্য ধরছেন না৷ তারাই বারবার বলছেন, সিজার করতে৷ তাঁরা আসলে বাচ্চাকে নিয়ে কোনোরকম ঝুঁকির মধ্যে যেতে চান না৷

তাহলে সিজারের প্রতি গর্ভবতী মায়ের আগ্রহ কমা না বাড়া উচিত?

আগ্রহটা কোনোভাবেই বাড়া উচিত না৷ সিজারটা এখন অনেকটা নেশার মতো বা গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ যদি নর্মাল হওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে সেটাই করা উচিত৷

আপনিও কি মনে করেন সিজার একটা ফ্যাশান হয়ে দাঁড়িয়েছে?