সন্তান জন্মদানে ভীতি তৈরি করছে জলবায়ু পরিবর্তন | বিশ্ব | DW | 18.05.2019
  1. Inhalt
  2. Navigation
  3. Weitere Inhalte
  4. Metanavigation
  5. Suche
  6. Choose from 30 Languages

জলবায়ু পরিবর্তন

সন্তান জন্মদানে ভীতি তৈরি করছে জলবায়ু পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তন সন্তান জন্মদানে অনীহা কিংবা ভয় তৈরি করছে উন্নত বিশ্বের অনেক নারী-পুরুষের মধ্যে৷ তাঁদের কেউ কেউ সন্তান জন্ম না দেওয়াকে জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলার ক্যাম্পেইন হিসেবেও দেখছেন৷

অন্য সব মায়ের মতো সন্তান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মনের কোণে পোষণ করেন জার্মানির স্কুল শিক্ষিকা ফেরেনা ব্রুনশভাইগার৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সন্তানের অনাগত ভবিষ্যতের ঝুঁকি তাড়িত করছে তাঁকে৷

এ বিষয়টিকে সামনে রেখে যেসব নারী ও তরুণ-তরুণী সন্তান না নেওয়ার আন্দোলেন শুরু করেছেন, এখন তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের এই বাসিন্দা৷

নির্বাচিত প্রতিবেদন

ব্রুনশভাইগার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমরা এটা নিয়ে দীর্ঘ সময় গভীরভাবে চিন্তা করেছি৷ ঘটনাচক্রে জলবায়ু পরিবর্তনই  আমার কাছে (সন্তান না নেওয়ার) প্রধান কারণ হিসাবে প্রতীয়মান হয়েছে৷ অবশ্য আমি অনেক সংগ্রাম করেছি এটা নিয়ে৷ কারণ, আমরা শিশুদের ভালোবাসি৷ আমার স্বামীও একজন স্কুল-শিক্ষক৷ বোধ করি, আমরা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি৷''

এভাবে পৃথিবীব্যাপী তরুণ সমাজের একটা অংশের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন৷ সর্বোপরি, বিশ্বব্যাপী বন্যা, খরা ও ঝড় থেকে শুরু করে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য চিন্তায় ফেলছে তাঁদের৷

বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন, গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে অভূতপূর্ব কোনো পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের আরো শত শত মিলিয়ন মানুষ বিপদের সম্মুখীন হবে৷

কম সন্তান নেওয়া, বিমানে কম চড়া এবং উদ্ভিদ জাতীয় খাবার খেয়ে উন্নত বিশ্বের মানুষ ব্যক্তিগতভাবে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে পারেন বলে বিজ্ঞানীদের ভাষ্য৷

স্কুল-শিক্ষিকা ব্রুনশভাইগারের মতো অন্যরাও মনে করেন, এমতাবস্থায় পৃথিবীর জনসংখ্যা আর বাড়ানো এক ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা৷ কারণ, ২০১৭ সালের ৭৬০ কোটি থেকে ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০০০ কোটি হতে চলেছে, যা কার্বন নিঃসরণ ও সম্পদের সমস্যা বাড়ানোর বড় কারণ হবে৷

আবার কেউ বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদের সম্মুখীন করবে৷ মিউজিশিয়ান ও অ্যাক্টিভিস্ট ব্লাইথ পেপিনোরও তাই মত ৷ সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা গভীরভাবে পোষণ করলেও দুই বছর আগে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন পড়ার পর মত পাল্টে যায় তাঁর৷

যেসব নারী সন্তান জন্ম না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন, এখন তাঁদের নিয়ে ‘বার্থস্ট্রাইক' নামে বিশ্বব্যাপী একটি ক্যাম্পেইন গ্রুপ চালু করেছেন পেপিনো৷ ‘জীববৈচিত্র্যে সংকটের ভয়াবহতা এবং সরকারি উদ্যোগের অভাবের' ফলে নারীরা এরকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে তাঁর ভাষ্য৷

পেপিনো রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমরা নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছি না৷ এটা যখন ভাবি, তখন আমি বুঝতে পারি সন্তান নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷''

যদিও এটাকে মায়েদের জন্য এক ধরনের অবিচার বলে মানছেন তিনি৷ কারণ, সন্তান না নেওয়া ‘বড় ধরনের একাকীত্বেরই' ব্যাপার৷ পেপিনো বলেন, ‘বার্থস্ট্রাইক' প্রচারাভিযানের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সহজে ‘দৃষ্টিগ্রাহ্য' বার্তাই দিতে চাচ্ছেন তাঁরা, যা তাঁদের আন্দোলনে আবেগের সংযোগও তৈরি করছে৷

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উদ্বেগ জন্মহারে কতটা প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উপাত্ত পাওয়া যায়নি৷ তবে ২০১৭ সালের এক হিসেব থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি নারীর গড় সন্তানের সংখ্যা ১ দশমিক ৮-এ নেমে এসেছে, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন৷ অন্য উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে জন্মহার স্থিতিশীল থাকতে কিংবা কমতে দেখা গেছে৷

জনসংখ্যার ওঠানামার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা কষ্টকর হলেও জলবায়ু পরিবর্তন যে এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে তা স্পষ্ট৷ কারণ, একটা বড় অংশের মানুষ এর ফলে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে ভীতি কিংবা অনীহার কথা বলছেন৷

যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার লোকের মধ্যে চালানো এক জরিপে দেখা যায়, ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি নারী সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় নিচ্ছেন৷ আরেক গবেষণায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্বেগ থাকলেও ৩৩ শতাংশ বলছেন, এরপরও তাঁরা সন্তান নেবেন এবং পরিবার চালু রাখবেন৷

‘জলবায়ু নায়ক’ ভুটান একাই লড়ে যাচ্ছে

জনসংখ্যা বিতর্ক

মায়েদের এমন উদ্বেগ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জনসংখ্যার সম্পর্ক নিয়ে পুরোনো বিতর্ককে নতুন করে সামনে আনছে৷ কেউ কেউ দুটোকে সম্পর্কিত করার চেষ্টা করলেও অনেকে আবার থোড়াই কেয়ার করছেন৷

কম-সন্তান জন্মদানকে উন্নত বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে একটি সফল উদ্যোগ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল ২০১৭ সালের এক গবেষণায়৷ ওই গবেষণায় দেখানো হয়, একটি সন্তান কম জন্ম দিলে, ভবিষ্যতে তিনি এবং তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের হাত থেকে বিশ্ব প্রতিবছর ৫৮ টন কার্বন ডাই অক্সাইড রক্ষা পাবে৷

‘‘এটা একটা ভীতিকর বিষয়,'' বলেছেন টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক পরামর্শক ক্যারেন হার্ডি৷ ‘‘অনেকে বলতে চান, ‘জনসংখ্যা আর জলবায়ু পরিবর্তনকে' মেলানোর কিছু নেই৷ কিন্তু আমার মনে হয়, এমনটা বলা বালির মধ্যে মাথা লুকানোর মতো৷ আমি দেখেছি, তরুণরা এমন কুসংস্কার ভাঙতে চাইছেন৷''

তবে তিনি এ-ও বলেন, জনসংখ্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক বোঝা খুব সহজ নয়৷ কারণ, কার্বন নিঃসরণের হিসাব বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়৷

এক্ষেত্রে আফ্রিকার দেশ নাইজারের উদাহরণ টানেন হার্ডি৷ জন্মহারের দিক থেকে পৃথিবীর শীর্ষ ওই দেশ এটি৷ সে দেশে প্রতিজন নারী গড়ে সাত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বলে ২০১৬ সালের হিসাবে দেখা যায়৷

তবে কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন অবস্থানেই আছে নাইজার৷ বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, সেখানে প্রত্যেকে প্রতি বছর গড়ে মাত্র দশমিক ১ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণ করে থাকেন৷ এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিজন গড়ে কার্বন নিঃসরণ করে থাকেন ১৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন৷

‘‘এটি নিছক কোনো সংখ্যা নয়,'' বলেছেন জন্মদানের অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা ‘কনসিভেবল ফিউচার' সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেগান কালম্যান৷ তাঁর মতে, ‘‘অ্যামেরিকার মধ্যবিত্ত মানুষ যে পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য ও অন্য জিনিস গ্রহণ করে, অন্যান্য দেশে সেটা করতে হলে পৃথিবীকে প্রায় পাঁচ গুণ বড় করতে হবে৷''

এমবি/এসিবি (রয়টার্স)