‘শুধু সরকারি অর্থ দিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়' | আলাপ | DW | 06.11.2017
  1. Inhalt
  2. Navigation
  3. Weitere Inhalte
  4. Metanavigation
  5. Suche
  6. Choose from 30 Languages

সাক্ষাৎকার

‘শুধু সরকারি অর্থ দিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়'

খেলাধুলার পেছনে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলার তেমন সাফল্য নেই৷ সমস্যা কোথায়? ডয়চে ভেলের সঙ্গে এ নিয়েই কথা বলেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট ড. বীরেন সিকদার৷

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে কয়টি ফেডারেশন আছে?

অ্যাডভোকেট ড. বীরেন সিকদার: দেশে আমাদের অনুমোদন দেয়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন আছে ৪৯টি৷

এর মধ্যে ক্রিকেটকেই কেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়?

ক্রিকেটকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই না৷ আমাদের অনুমোদিত ৪৯টি ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি সফলতা অর্জন করে, মানুষ তাদের দিকে আগ্রহ দেখায়৷ গুরুত্ব তারা নিজেরাই তৈরি করে৷ যারা বেশি সাফল্য নিয়ে আসে, তাদের দিকে মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে৷ 

অনেক খেলার নাম আমরা জানলেও তা নিয়ে প্রতিযোগিতার কথা শুনি না৷ কারণ কী?

আমাদের যে ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশন আছে, তারা তাদের মতো করে কর্মকাণ্ড চালায়৷ এর মধ্যে অনেক খেলা জনপ্রিয় না বলে মানুষ সেগুলো জানতে পারে না৷ তারা কিন্তু কোনো-না-কোনো কর্মকাণ্ড করে৷

‘এ কথা সত্য যে দেশে নামকাওয়াস্তে কিছু ফেডারেশন আছে’

গ্রামের অনেক খেলা অবহেলার শিকার হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে৷ এগুলো রক্ষার কোনো উদ্যোগ আছে?

এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আমাদের দেশে অনেক খেলা আছে, যা একেবারেই আমাদের নিজস্ব৷ ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত৷ আমাদের পূর্বপুরুষদের মাঝ থেকে অনেক খেলাই উঠে এসেছে৷ সেই খেলাগুলোর মধ্যে অনেক খেলারই বর্তমানে অনুশীলন নেই৷ সেগুলো তুলে আনার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমাদের বলেছেন যে, ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে, সেগুলো আবার তুলে আনা দরকার৷ এই খেলাগুলো রক্ষায় আমরা জাতীয়ভাবে এখন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছি৷ যেমন, লাঠিখেলা, দাঁড়িয়াছুট আছে৷ আমরা নৌকাবাইচকে আরো জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছি৷  

নামকাওয়াস্তে অনেক ফেডারেশনের নাম শোনা যায়৷ এগুলোকে আর্থিক বরাদ্দও দেয়া হয়, তাদের অর্থ দেয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত?

নামকাওয়াস্তে কিছুফেডারেশন আছে সত্য৷ দেশে সেইসব খেলা জনপ্রিয় না হলেও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের কিছু তৎপরতা আছে৷ আন্তর্জাতিকভাবে তাল মিলিয়ে চলতে, ওই খেলাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়৷ যেসব খেলা জনপ্রিয়, তাদের আমরা বেশি গুরুত্ব দেই এবং অর্থ বরাদ্দও তাদের বেশি দেয়া হয়৷ যে খেলাগুলো ভালো করে না, আমরা তাদের সেভাবেই বিবেচনা করে অর্থ বরাদ্দ দেই৷ সবাইকে সমানভাবে অর্থ বরাদ্দ দেই না৷

ফেডারেশনগুলোর বাজেট সম্পর্কে যদি বলেন...

পৃথীবির কোনো দেশেই শুধু সরকারি অর্থ দিয়ে খেলা পরিচালনা করা যায় না৷ এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্পন্সর দিয়ে সহযোগিতা করে৷ যাঁরা ভালো করতে পারে তাঁদের প্রতি স্পন্সররা ঝুঁকে পড়েন, আর যাঁরা ভালো করতে পারেন না, তাঁদের কেউ স্পন্সর দিতে চান না৷ শুধু সরকারি বাজেট নিয়ে এটা চলবে, এই ধারণা ঠিক না, সেটা সম্ভবও না৷ আমরা শুধু উৎসাহিত করতে বাজেট দিয়ে থাকি, তার মধ্যে কম-বেশি আছে৷

বাংলাদেশে ফুটবল একসময় জনপ্রিয় খেলা ছিল, এখনো জনপ্রিয়৷ কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে ফুটবল ভালো কিছু করতে না পরার কারণ কী?

ফুটবল নিঃসন্দেহে জনপ্রিয়৷ গ্রাম-গঞ্জে এখনো জনপ্রিয়৷ সেখানে ফুটবল খেলা হলে হাজার হাজার মানুষ খেলা দেখতে হাজির হন৷ এটার মান পড়ে গেছে এটাও সত্যি৷ তবে ফুটবলে প্রতিযোগীও এখানে বেশি৷ বিশ্বের ২০০ এর বেশি দেশ ফুটবল খেলে৷ অন্যদিকে দেখেন মাত্র ১৪টি দেশ ক্রিকেট খেলে৷ ফলে এখানে প্রতিযোগিতা কম৷ ফুটবলে কিন্তু এত দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে উঠে আসা কঠিন৷ এমনকি আমাদের এশিয়াতেই ভালো করাও কঠিন৷ স্কুলগুলোতে ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আমরা সেটা চালু করেছি৷ আমাদের মেয়েরা ফুটবলে ভালো করছে৷ এখানে ফেডারেশনের আরো বেশি যোগ্য ভূমিকা পালন করা দরকার৷ এবার ফুটবলে ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতা করতে ৩১টি ফেডারেশনকে টাকা দিয়েছিলাম৷ তারা সারাদেশ থেকে ২২ হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে ২০০ প্লেয়ারকে তুলে আনে৷ এর মধ্যে ৫০ জনকে বাছাই করে বিকেএসপিতে সার্বক্ষণিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক মানের কোচ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে৷ আমরা আশা করছি, শিগগিরই ফুটবলের উন্নতি হবে৷

ক্রিকেট ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের আর কোন খেলা বেশি পরিচিত?

আমাদের শুটিং ভালো করছে, আর্চারি ভালো করছে, হকি মোটামুটি ভালো করছে৷ হকিতে তো আমরা একটা এশীয় টুর্নামেন্ট করে ফেললাম৷ অপ্রচলিত খেলা হলেও রোলার স্কেটিংয়ে আমরা ভালো করছি৷ ফুটবল, ক্রিকেটে আমাদের ভালো সম্ভাবনা আছে৷ এখন কথা হলো যারা ভালো করতে পারবে, তাদের আমরা সহযোগিতা দেবো৷

বলা হয়, যে খেলায় সরকার যত বেশি বরাদ্দ দেয়, সেই খেলা তত বেশি ভালো করে – এমন ধারণা কি ঠিক?

এটা মোটেই ঠিক না৷ যারা ভালো করে, তারা নিজেদের প্রচেষ্টায় ভালো করে৷ আমি আগেও বলেছি, শুধু সরকারি অর্থায়নে খেলা পরিচালনা করা সম্ভব নয়৷ পৃথিবীর কোথাও সেটা হয় না৷ এরজন্য স্পন্সর দরকার৷ যারা ভালো করে, তাদের পেছনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করে থাকে৷ সুখের বিষয়, আমাদের স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসছে৷

যেসব অখ্যাত ফেডারেশনে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়, সেগুলো কি দুর্নীতির উৎস?

তাদের যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়, তার অডিট করা হয়, খরচের হিসাব নেয়া হয়৷ তারা ইচ্ছে করলেই নিজেদের মতো খরচ করতে পারে না৷ আমরা সব সময় তাদের মনিটরিং করি যাতে আমাদের দেয়া অর্থ মিসইউজ না হয়৷

বাংলাদেশে বিকেএসপি একমাত্র ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ এই ধরনের আর কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠার কারণ কী?

বিকেএসপিএকমাত্র না৷ আমাদের সবগুলো বিভাগে বিকেএসপির শাখা আছে৷ আমাদের বিভাগীয় শহরে যে আটটি বিকেএসপি আছে, সেগুলোকে আরো অত্যাধুনিক করে ঢাকার মতো সব সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন৷ আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি এবং চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷ আমরা জনবল কাঠামো তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি৷ সেটা পাশ হলে এই ৮টি বিকেএসপিতে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ শুরু হবে৷ এগুলো কিন্তু এখনো আছে৷ কিন্তু তাদের কার্যক্রম তেমন নেই৷ আমরা অর্থ এবং জনবল দিলেই তারা স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে কাজ শুরু করতে পারবে৷ তখন আমাদের একটা না, আটটা বিকেএসপি হয়ে যাবে৷

বন্ধু, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷